Collection: লাল শাক বীজ

লাল শাক এক প্রকারের শাক বা পাতা সবজি, যার পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এই শাক আগে শুধুমাত্র শীতকালে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এটি সারাবছরই পাওয়া যায়। এর রং লাল এবং রান্নার পর এটি থেকে লাল রং বের হতে দেখা যায়। এই সবজি ৬"-১২" হয়। গাছের কাণ্ড থেকে ভেঙে নিয়ে আসার পর ভাঙা কাণ্ড হতে পুনরায় নতুন গাছ গজায়।


তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

পুষ্টি ও গুণাগুণ

লালশাক দেখতে লালচে - গোলাপি ধরনের হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিনে পূর্ণ এই শাক। আমাদের দেশে অতি পরিচিত শাকগুলোর মধ্যে লালশাক এর তুলনা মেলা ভার। এই লাল শাক আমাদের শরীরে রক্ত তৈরি করে সবচেয়ে বেশি । খাবার চিবাতে পারে এমন শিশুদের জন্য লালশাক ভীষণ উপকারী। কারণ, শিশুদের আয়রন, আয়োডিন দরকার হয় প্রচুর পরিমাণে। আর লালশাক আয়রনের উৎকৃষ্ট উৎস। আস্তে আস্তে শিশুর পেটের ও হজমশক্তির অবস্থা বুঝে পরিমাণ বাড়াতে পারেন। বাড়ন্ত শিশু, পূর্ণ বয়স্কদের জন্যও বয়ে আনে সুফল। অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ মানে লো - ব্লাড প্রেশার, দুর্বলতা, ক্রমশ শক্তি কমে যাওয়া, ডায়াবেটিস রোগী, অস্টিও আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় লালশাক পালন করে অপরিহার্য ভূমিকা।গর্ভবতী অবস্থা থেকে শিশুর জন্ম ও মাতৃদুগ্ধ পান পর্যন্ত লালশাক ভীষণ জরুরি। তবে এখানেও খেয়াল রাখা দরকার, বেশির ভাগ গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে। তাই দুপুরে শাক খাওয়াই ভালো। কারণ, ইনটেসটাইন, অর্থাৎ খাবার হজমকারী জরুরি নালিবিশিষ্ট অঙ্গ অধিক রাতে কাজ করে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচল থাকে বেশি। আর রাতে শাক পরিহার করাই ভালো।মেনোপোজ, মানে মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। মেনোপোজ হওয়া নারীদের হাড় দুর্বল হয়ে আসে। ত্বক ও চুলে আসে বৈরী ভাব। ভঙ্গুর হতে থাকে নখ। শরীরে দেখা যায় আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। লালশাক এ অবস্থায় হতে পারে উপকারী বন্ধু। দেহে রক্ত বাড়াবে আর ত্বক, চুল ও নখের পুষ্টি জোগাবে। পুষ্টিমূল্য বিচারে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্যই লালশাক উপকারী।

তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

লাল শাক চাষ পদ্ধতি:

উন্নত জাতঃ বারি লাল শাক-১, আলতাপাতি ইত্যাদি সারাবছর চাষ উপযোগী।


বপনের সময়ঃ সারাবছর বিশেষত শীতকালে।


চাষপদ্ধতিঃ মাটির প্রকারভেদে ৪-৬টি চাষ ও মই দিতে হবে। প্রথম চাষ গভীর হওয়া দরকার। এতে সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাজনক, পরিচর্যা সহজ এবং সেচের পানির অপচয় কম হয়। সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। সরাসরি বীজ বুনলে, লাইন থেকে লাইন ১৫ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ৮-১০ ইঞ্চি দূরে লাগাতে হবে।


বীজের পরিমানঃ শতক প্রতি ৮-১০ গ্রাম।


সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম শতক প্রতি সার হেক্টর প্রতি সার
জৈব/ গোবর সার ৪০ কেজি ১০ টন
ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম ২০০কেজি
টিএসপি ৪০০ গ্রাম ১০০কেজি
এমওপি ৬০০ গ্রাম ১৫০ কেজি

টিএসপি সারের বদলে ডিএপি সার দিলে প্রতি কেজি ডিএপি সারের জন্য ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া (হেক্টর প্রতি) কম দিবেন। এলাকা বা মৃত্তিকাভেদে সারের পরিমাণে কম-বেশি করুন।

পোকামাকড়ঃ
• বিছা/শুয়োপোকা দমনে এমামেক্টীন বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ প্রোক্লেইম ১০ গ্রাম) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ রিপকর্ড ১০ তরল অথবা সিমবুশ ১০ তরল ২০ মিলিলিটার/৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
• ফ্লি বিটল পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ রিপকর্ড ১০ তরল অথবা সিমবুশ ১০ তরল ২০ মিলিলিটার/৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
• পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ রিপকর্ড ১০ তরল অথবা সিমবুশ ১০ তরল ২০ মিলিলিটার/৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
• থ্রিপস পোকা এবং জাবপোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।


রোগবালাইঃ
• পাউডারি মিলডিউ রোগ দমনে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ কুমুলাস ৪০ গ্রাম বা গেইভেট বা মনোভিট ২০ গ্রাম) অথবা কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ গোল্ডাজিম ৫ মিলিটার বা এমকোজিম বা কিউবি বা কমপ্যানিয়ন ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর আক্রমণের শুরু থেকে মোট ২-৩ বার প্রয়োগ করুন।
• মরিচা রোগ দমনের জন্য প্রপিকোনাজল জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ টিল্ট ২৫০ ইসি ৫ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
• এনথ্রাকনোজ এবং পাতার দাগ রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ গোল্ডাজিম অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
• মোজাইক রোগ দমনে জমিতে সাদা মাছি, জাব পোকা দেখা গেলে (বাহক পোকা) ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক (যেমনঃ এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। সকাল বেলা গাছে ছাই ছিটিয়ে দিলে এই পোকা গাছ থেকে পড়ে যাবে৷ ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপদ পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে ৭ থেকে ১৫দিন পর বাজারজাত করুন।


আগাছাঃ সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা বাছাই। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।


সেচঃ শুষ্ক মৌসুমে এক সপ্তাহ পর পর সেচ দিতে হবে। নতুবা শাক খসখসে হয়ে যাবে।


আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ খরা দেখা দিলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থা করা। জমির পানি বের করার জন্য নালা তৈরি ও মেরামত করে রাখুন।


ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন শাক ৪০- ৫৬ কেজি এবং বীজ ১.৮-২.২ কেজি।


সংগ্রহঃ বীজ বোনার ২০-২৫ দিন পর থেকে শাক বিপননের উপযোগী হয়।

তথ্যসূত্র: http://aisekrishi.org/

You may also like

1 of 5