Collection: ডাঁটা বীজ

সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাকের মধ্যে অন্যতম ডাঁটাশাক। বাজারে সারা বছরই এটা পাওয়া যায়। ইলিশ বা চিংড়ি যেকোনোটি দিয়ে ভাজি করা ডাঁটাশাক অনেকের অতিপ্রিয় তরকারি। ডাঁটাশাক খাওয়া যায় আরও নানাভাবে।
ডাঁটাশাক একপ্রকার লতাজাতীয় উদ্ভিদ। গাছের পাতা ও ডাঁটা শাক হিসেবে খাওয়া হয় বলে সচরাচর একে ডাঁটাশাক বলে উল্লেখ করা হয়। এর মাংসল লতা দ্রুতবেগে ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর মোটা রসাল ডাঁটা ও পাতায় মৃদু সুগন্ধ আছে। পাতা খানিকটা খসখসে। এই শাক দুই ধরনের। একটির পাতা সবুজ ও ডাঁটা হালকা সবুজ। অন্যটির পাতাও সবুজ, তবে কাণ্ড বা ডাঁটা লালচে বেগুনি রঙের।
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো

পুষ্টিগুন

প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী ডাঁটাশাকে জলীয় অংশ ৯২ শতাংশ, খাদ্যশক্তি- ২৩ কিলোক্যালোরি, আমিষ- ২.৫ গ্রাম, চর্বি- ০.৩ গ্রাম, শ্বেতসার- ৪.০ গ্রাম, ভিটামিন এ- ২৯০০ আন্তর্জাতিক একক, ভিটামিন সি- ৪৩ মিলিগ্রাম, ০.০৩ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.১৬ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাবিন, ৮৫মাইক্রোগ্রাম ফোলেট, ২১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৫০ মিলিগ্রাম ফসফেট, ২.৩ মিলিগ্রাম আয়রন, ২০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম ও ৬১১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম আছে।

ডাঁটাশাক চাষ পদ্ধতিঃ

উন্নত জাত

 বারি মরিচ -১, উন্নত জাতঃ বারি ডাঁটা-১, বারি ডাঁটা-২


বপনের সময়ঃ চৈত্র-আষাঢ় (মার্চ-জুলাই)


চাষপদ্ধতিঃ জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করতে হবে। বেশি ভেজা মাটিতে বীজ বোনা যাবে না। মাটির সাথে সার মেশানোর পর ৩ মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করতে হবে। দুই বেডের মাঝে ১২ ইঞ্চি চওড়া ও ৮ ইঞ্চি গভীর নালা রাখতে হবে। লাইনে বীজ বোনা ভালো। একটি কাঠি নিয়ে বেডে ১০ থেকে ১২ইঞ্চি পরপর ১ থেকে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর করে লাইন বা দাগ টেনে তার মধ্যে ডাঁটার বীজ বুনতে হবে। লাইনে এমন ভাবে বীজ বোনার পর হাত দিয়ে দাগের দুপাশের মাটি টেনে বীজ ঢেকে দিতে হবে। জমি শুঁকনো বা মাটিতে রস কম থাকলে বীজ বোনার পর ঝাঁঝরি দিয়ে সারি বরাবর হালকা সেচ বা পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে বীজ ভালো গজাবে। জমি জো এনে বীজ বোনা ভালো।


বীজের পরিমানঃ
জাত ভেদে শতক প্রতি ৮-১০ গ্রাম।


সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম শতক প্রতি সার হেক্টর প্রতি সার
কম্পোস্ট ৪০ কেজি ১০ টন
ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম ১০০ কেজি
টিএসপি ৪০০ গ্রাম ১০০ কেজি
পটাশ ৩০০ গ্রাম ৭৫ কেজি

ফসলের সার সুপারিশ ( হেঃ প্রতি): জৈব/ গোবর সার ১০ টন, টিএসপি ১০০ কেজি, ইউরিয়া ১০০কেজি এবং এমওপি ৭৫ কেজি সার শেষ চাষের সময় সমানভাবে ছিটিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিন। বীজ বোনার ২০ দিন পর ইউরিয়া ১০০কেজি এবং বীজ বোনার ৪০ দিন পর ইউরিয়া ১০০কেজি সার উপরি প্রয়োগ করুন। টিএসপি সারের বদলে ডিএপি সার দিলে প্রতি কেজি ডিএপি সারের জন্য ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া কম দিবেন। এলাকা বা মৃত্তিকাভেদে সারের পরিমাণে কম-বেশি করুন।
ফসলের সার সুপারিশ (শতক প্রতি) : জৈব/ গোবর সার ৪০ কেজি, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৩০০ গ্রাম সার শেষ চাষের সময় সমানভাবে ছিটিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিন। বীজ বোনার ২০ দিন পর ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম এবং ৩০০ গ্রাম এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করুন।


সেচঃ জমিতে পানি যাতে না জমে সে জন্য পানি বের করার ব্যবস্থা রাখুন। পানির আপচয় রোধের জন্য ফিতা পাইপ/ফুটপাম্প/ঝাঝরির সাহায্যে সেচের ব্যবস্থা করুন।


আগাছাঃ সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা বাছাই। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।


আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।


পোকামাকড়ঃ
• জাব পোকা- আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
• পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা- সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড ১০ তরল অথবা সিমবুশ ১০ তরল ২০ মিলিলিটার / ৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
• পাতা মোড়ানো পোকা- আক্রমণ বেশি হলে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ( যেমন সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন।
• লেদা পোকা-সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে, ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।
• ফ্লি বিটল পোকা-সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড ১০ তরল অথবা সিমবুশ ১০ তরল ২০ মিলিলিটার / ৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
• ঘোড়া পোকা-অতি আক্রমণ না হলে রাসায়নিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন নেই। অতি আক্রমণে সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ কট বা ম্যাজিক ১০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) সকালের পরে সাঁজের দিকে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করুন।


রোগবালাইঃ
• ডাটার ছত্রাকজনিত ঢলেপড়া রোগ- ছত্রাকের আক্রমণ হলে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন (রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম) অথবা কার্বান্ডিজম জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন (এইমকোজিম ৫০;অথবা গোল্ডাজিম ৫০০ ইসি ১০ মিলি /২ মুখ ) ১০ লি পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ৩ বার গাছের গোড়ায় ও মাটিতে স্প্রে করুন। আক্রমণ বোশি হলে প্রথম থেকে প্রতি লিটার পানিতে ২গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে স্প্রে করুন। ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ হলে ক্ষেতের মাটিতে বিঘা প্রতি ২ কেজি হারে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে।
• ডাঁটা পাতার দাগ রোগ- রোগের আক্রমণ বেশি হলে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
• সাদা মরিচা রোগ- প্রপিকোনাজল জাতীয় বালাইনাশক (যেমন: টিল্ট ২৫০ ইসি ৫ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক ছিটানোর পর ১৫ দিন ফল তোলা থাকে বিরত থাকুন।
• গোড়া পচা রোগ- রোগের আক্রমণ বেশি হলে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
• এনথ্রাকনোজ- রোগের আক্রমণ বেশি হলে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।


সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।


ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১৫০-১৬০ কেজি।


সংরক্ষনঃ ছায়ায় সংরক্ষণ করুন। মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিন। বেশি দিন সংরক্ষণ এর জন্য হিমাগারে রাখুন।


তথ্যসূত্রঃ বামিস

You may also like

1 of 5