Collection: মরিচ বীজ

আমাদের প্রতিদিনের রান্নার তালিকায় কাঁচা মরিচের স্থান বেশ প্রচলিত। কাঁচা মরিচের মধ্যে রয়েছে এমন কিছু গুণ যা আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে কাঁচা মরিচের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। যেকোনো বাড়ি/বাসার সামনে বা পিছনে সামান্য ফুট জমিতে সারা বছরই মরিচের চাষ করা যায়। বাড়ীর ছাদে বা বারান্দায় মাটির টবেও কাঁচা মরিচের চাষ করে সারা বছরই কাঁচা মরিচের সুবিধা উপভোগ করা সম্ভব। কাঁচা মরিচ ভাইরাস ইনফেকশন, সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করে। আঘাতের যন্ত্রণা কমাতে কাঁচা মরিচের গুণ অপরিসীম। রান্নার মধ্যে কাঁচা মরিচের গুড়ো ব্যবহার করলেও উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে বেশী উপকার পাওয়া যায় কাঁচা মরিচের স্বভাবিক ব্যবহারে। শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাব পূরণে কাঁচা মরিচ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

তথ্য সূত্রঃ ইনকিলাব

 

পুষ্টিগুন

কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ১০০ গ্রাম মরিচে ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে । তাছাড়া মরিচে নানা রকম পুষ্টিগুন যেমনঃ ১ গ্রাম খনিজ পদার্থ৭ গ্রাম আঁশ,১০৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি২ গ্রাম আমিষ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম২ মিলিগ্রাম লৌহ২৩৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন,  ভিটামিন বি-২ ও ২৪ গ্রাম শর্করা ইত্যাদি রয়েছে ।

মরিচ চাষ পদ্ধতি

উন্নত জাত

 বারি মরিচ -১, বারি মরিচ-২ এবং বারি মরিচ -৩। বারি মরিচ -১ সারা বছর চাষ করা যায় । বারি মরিচ -২ গ্রীষ্মকালীন এবং বারি মরিচ-৩ শীতকালে চাষ উপযোগী। এছাড়াও সনিক, প্রিমিয়াম, ধুম, মেজর, ডেমন, চন্দ্রমুখী, হটমাস্টার, এম এস ফায়ার, যমুনা প্রভৃতি জাত রয়েছে।

বপনের সময় 

খরিফ-১ মৌসুমে: ১-৩০ ফাল্গুন (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৫ মার্চ)। খরিফ-২ মৌসুমে: শ্রাবণ-ভাদ্র (১৫ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর)। রবি মৌসুমে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর উপযুক্ত সময়।

সার ব্যবস্থাপনা

● গোবর প্রতি শতকে ৪০ কেজি
● ইউরিয়া প্রতি শতকে ১.৬ কেজি
● টিএসপি প্রতি শতকে ১ কেজি
● পটাশ প্রতি শতকে ৬০০ গ্রাম
● জিপসাম প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম
গোবর, টিএসপি, জিপসাম ও বোরন সম্পূর্ণ এবং এমওপি ৫০ কেজি শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। সম্পূর্ণ ইউরিয়া এবং বাকী এমওপি সমান ৩ কিস্তিতে  ২৫, ৫০ এবং ৭৫ দিন পর পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এমওপি সেচের পূর্বে গাছের গোঁড়া থেকে ১০-১৫ সেমি দূরে প্রয়োগ করে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।
চাষপদ্ধতি

মাটির প্রকার ভেদে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হবে। প্রথম চাষ গভীর হওয়া দরকার। সেচের  জন্য ১২  ইঞ্চি  প্রশস্ত নালা থাকবে। সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। লাইন  থেকে লাইন ২৪ -২৮ ইঞ্চি  এবং চারা থেকে চারা ১২ -১৬  ইঞ্চি  দূরে লাগাতে হবে।

বীজের পরিমান

জাত ভেদে শতক প্রতি ১০-১৫ গ্রাম ।

সেচ

জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেচের পর চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। শীত ও খরার সময় জমিতে ১৫ দিন পর পর পরিমিত পরিমানে সেচ দিতেহবে। ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমান মত আদ্রতা রাখতে হবে ।

আগাছা

আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার। ফসল বোনার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা বাছাই করতে হবে।সেচ দেয়ার আগে আগাছা  বাছাই করতে হবে।  

আবহাওয়া ও দুর্যোগ

অতিবৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রবি মৌসুমে নিম্ন তাপমাত্রা (১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে) থেকে চারা রক্ষার  জন্য বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে।

পোকামাকড়

● ফলছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোরানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশক (যেমন ভলিউম ফ্লেক্সি ৫ মিলিলিটার  অথবা ১মুখ) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার  অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।
● জাব পোকা দমনে  ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
● ক্ষুদে মাকড়ের  আক্রমণ সালফার গ্রুপের (কুমুলাস ডিএফ বা রনোভিট ৮০ ডব্লিউজি বা থিওভিট ৮০ ডব্লিউজি বা সালফোলাক ৮০ ডব্লিউজি, ম্যাকসালফার ৮০ ডব্লিউজি বা সালফেটক্স ৮০ ডব্লিউজি) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
● সাদা মাছি দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। 

রোগবালাই

● পাতা পচা এবং গোড়া পচা রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। গোঁড়া পচা রোগের ক্ষেত্রে মাটি ভিজিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
● এনথ্রাকনোজ দমনের জন্য কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে অথবা প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ মিলি/ ১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে  ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। 
● পাতায় হলদে মোজাইক রোগের বাহক পোকা (জাবপোকা) দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।

সতর্কতা

বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন।ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।

ফলন

জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ৪০-৫০ কেজি।

সংরক্ষন

মরিচ শুকানোর পর ছায়াযুক্ত স্থানে ঠান্ডা করতে হবে। ছয় মাস হতে ১ বছর পর্যন্ত মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে টিনের পাত্র, পলিব্যাগ, মাটির পাত্র, ডুলি বা ছালার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। দ্বিস্তরবিশিষ্ট পলিথিনের ব্যাগ ও টিনের পাত্রে পলিথিন দিয়ে মরিচ রাখলে রং ও গুনগত মান ভাল থাকে। সংরক্ষিত মরিচ মাঝে মাঝে রৌদ্রে দিলে ভাল থাকে। মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বোটা যেন মরিচ থেকে আলাদা না হয়, সেদিকে খেয়ার রাখতে হবে।

তথ্য সূত্রঃ বামিস 

You may also like

1 of 5