Collection: টমেটো বীজ

টমেটো শীতের ফল হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে শীতের সময় এই সবজির স্বাদ অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। সালাদ হিসেবে ও রান্না টমেটো খুবই সুস্বাদু।

পুষ্টি ও গুণাগুণ

টমেটোতে ভিটামিন এ কে, বি১, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭ ও ভিটামিন সি সহ নানা প্রাকৃতিক ভিটামিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে ফোলেট, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোলিন, কপার এবং ফসফরাসের মতো খনিজও থাকে। নিয়মিত টমেটো খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।

টমেটো খাওয়ার উপকারিতা

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেতে পারেন টমেটো।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টমেটো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্ট্রেস হরমোন কমায়। এ কারণে নিয়মিত টমেটো খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং শরীর সুস্থ থাকে।
২. টমেটা খেলে শরীরের রক্তশূন্যতা দূর হয়। নিয়মিত দু-একটি করে টমেটো খেলে রক্তের কণিকা বৃদ্ধি পায়, রক্তশূন্যতা রোধ হয়। এ ছাড়া রক্ত পরিষ্কার, হজমে ভালো হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
৩. টমেটোতে থাকা লাইকোপিন ত্বকের ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বক পরিষ্কার ও সতেজ রাখে।
৪. টমেটোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এ কারণে নিয়মিত টমেটো খেলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
৫. টমেটো ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সির ভালো উৎস। এ দুটি উপাদান ক্ষতিকারক ফ্রি র্যা ডিক্যাল থেকে শরীরকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এতে শরীর সুস্থ থাকে।
৬. টমেটোতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
৭. টমেটো ক্রোমিয়াম নামক এক ধরনের খনিজ থাকায় এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এ কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী।
সূত্র : এনডিটিভি

উন্মত জাতের বীজ

আগাম জাত
• সফল, বিপুল, বিগল, বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫, রোমা ভিএফ, রোমারিও, টিপু সুলতান, গ্রেট পেলে, ডেল্টা এফ ১,উন্নয়ন
• এফ ১, পুষারুবী, নিউ রূপালী এফ ১ ইত্যাদি।
• এসব শীতকালীন জাত আগাম ফলে।
• বীজ বপনঃ জুলাই - সেপ্টেম্বর।
ভরা মৌসুমী জাত
• সাথী, উপলা, মানিক, রতন, বারি টমেটো ৩, বারি টমেটো ৬, বারি টমেটো ৭, বারি টমেটো ৯, বাহার, মহুয়া ইত্যাদি।
• শীতকালে এসব জাতের গাছে ফল ধরে।
• বীজ বপন : সেপ্টেম্বর-অক্টোবর।
• চারা রোপন : অক্টোবর- নভেম্বর।


নাবি শীত মৌসুমী জাত
• হাইটম-২, বাহার, রোমা ভিএফ, রাজা, সুরক্ষা ইত্যাদি।
• বীজ বপনঃ জানুয়ারী
• ফসল সংগ্রহঃ মার্চ-এপ্রিল।

নিম্নে টমেটো চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হল:

বীজতলা
• সরাসরি জমিতে বীজ বুনে ও চারা রোপন করে টমেটো চাষ করা যায়।
• দ্রুত ও ভাল ফলন পেতে বীজতলায় চারা তৈরি করে মূল জমিতে লাগানো উচিৎ।
• রোদযুক্ত উঁচু জায়গায় পরিস্কার করে ভালভাবে মাটি চাষ দিয়ে সমতল করে বীজতলা তৈরি করতে হবে।
• প্রতি ১০ গ্রাম বীজের জন্য ৪ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা নার্সারী বেড দরকার।
• ছিটিয়ে বপনের জন্য সাধারণত প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন।
• বীজ বপনের ৭-১০ দিন পূর্বে প্রতি বেডে ১০০ গ্রাম টি.এস.পি, ১০০ গ্রাম এম.পি, ৫০ গ্রাম জিপসাম ও পর্যাপ্ত গোবর সার প্রয়োগ করে মাটি ভালভাবে কুপিয়ে সমান করতে হবে।
• বীজ থেকে চারা গজাতে ৬-১৪ দিন সময় লাগে।
• শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য কার্তিক-অগ্রাহায়ণ এবং আগাম চাষের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজ বুনতে হবে।
• ৩/৪ দিন পর পর প্রয়োজন অনুসারে ঝরনার সাহায্যে বীজতলায় সেচ দিতে হবে।


জমি তৈরী
• মাটি নির্বাচন : দো-আঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য উত্তম ।
• গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের জন্য ৮-১০ ইঞ্চি উঁচু এবং ৮-১০ ফুট চওড়া বেড তৈরি করতে হয়।
• সেচ দেওয়ার সুবিধার্থে ২টি বেডের মাঝে ১ফুট নালা রাখতে হয়।
• শেষ চাষ ও মই দেওয়ার পূর্বে জমিতে পরিমানমত সার দিতে হবে।


চারা রোপন
• ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা লাইন থেকে লাইন ২ফুট এবং চারা থেকে চারা ১.৫ ফুট দূরত্বে রোপন করুন।
• শীতকালীন টমেটোঃ মধ্য কার্তিক থেকে মাঘের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত চারা রোপন করা যায় ।
• আগাম চাষঃ ভাদ্র-আশ্বিন মাস, নাবি চাষঃ ফাল্গুণ মাস এবং গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য চৈত্র-বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করতে হবে


সার ব্যবস্থাপনা
সারের নাম কেজি/একরে প্রয়োগের সময়
ইউরিয়া ২০০-২৪০ অর্ধেক অংশ চারা লাগানোর ৩য় সপ্তাহে ও বাকী অর্ধেক ৫ম সপ্তাহে রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে।
টি.এস.পি ১৬০-২০০ শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে।
এম.পি ৮০-১২০ ইউরিয়ার সাথে চারা লাগানোর পর ২য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে।
গোবর ৩-৪ টন শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে।
গ্রোজিন ৩ শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে।

আন্তঃ পরিচর্যা
• ১ম ও ২য় কিস্তি সার প্রয়োগের পূর্বে মরা পাতা ছাটাই করে দিতে হবে।
• অধিক ফলনের জন্য টমাটো গাছে খুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
• জমিতে প্রয়োজন অনুসারে সেচ প্রদান করতে হবে।
• ভাইরাস রোগ দেখা দিলে গাছ তুলে দূরে কোথাও পুতে ফেলতে হবে।

বালাই ব্যবস্থাপনা


আগাছা দমন
• গাছ বাড়তে থাকলে, মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার এবং মাটি আলগা করে দিতে হবে।


চারা ধ্বসা রোগ:
রোগেরলক্ষণ
• বীজতলায় চারা গজানোর পর থেকে মুল ক্ষেতে চারা রোপণ পর্যন্ত এ রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে।
• অংকুরিত বীজের বীজপত্র, কাণ্ড এবং শিকড় নষ্ট করে দেয়।
• আক্রান্ত চারা প্রথমে হালকা সবুজ হয়ে ঢলে যায় এবং সম্পূর্ণ চারাটিই মরে যায়।
• আক্রান্ত চারা ২-৪ দিনের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


দমনব্যবস্থাপনা
• দীর্ঘ সময় ছায়াযুক্ত স্থানে বীজতলা তৈরী না করা এবং ঘন করে বীজ না বোনা।
• বীজতলায় বীজ ফেলার আগে মাটি ভাল করে চাষ দিয়ে কয়েকদিন (২-৩ দিন) ভালভাবে শুকিয়ে নেয়া।
• বীজতলায় কখনো যেন পানি দাড়াতে না পারে।
• মূল জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার (হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন) প্রয়োগ করা।
• শোধনকৃত বীজ বপন করা।
• আক্রান্ত গাছ জমি থেকে তুলে ধ্বংস করতে হবে।


নাবি ধ্বসা রোগ:
রোগের লক্ষণ
• যে কোন বয়সের গাছ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে ফুল আসার সময় বেশী (জানুয়ারি মাসে) আক্রমণ করে।
• প্রথমে পাতায় ফ্যাকাশে সবুজ রঙের দাগ পড়ে এবং দ্রুত তা বাদামী রঙ ধারণ করে পুরো পাতাই ঝলসে দেয়।
• সাধারণত: পাতার আগা ও কিনারা থেকে এই ঝলসানো শুরু হয়। গোড়ার দিকের পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয়।
• টমেটোর কান্ড ও ফলেও এ রোগ ক্ষতি করে। কান্ড ও ফলে বাদামী দাগ পড়ে আক্রান্ত অংশ ঝলসে যায়।
• আক্রান্ত ফল টিপ দিলে শক্ত মনে হয়।


অনুকুল পরিবেশ
• মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে এ রোগের আক্রমণ শুরু হয় এবং ৩-৪ দিনের মধ্যেই সব গাছ আক্রান্ত হয়।
• শুষ্ক আবহাওয়ায় এ রোগ ধীরে ধীরে বাড়ে এবং আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে কুঁকড়ে আসে ও মচমচে হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
• রোগমুক্ত সুস্থ বীজ বপন করা। সম্ভব হলে বীজ শোধন করে নেয়া। আক্রান্ত ফল ও গাছ তুলে ধ্বংস করা।
• অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা, ঘন করে চারা রোপণ না করা, সুষম ও অধিক জৈব সার প্রয়োগ করা।
• ক্ষেতে রোগের উপস্থিতি ও রোগ বিস্তারের অনুকূল আবহাওয়া থাকলে অনুমোদিত মাত্রায় রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডাব্লিউজি প্রয়োগ
• করা (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে রিডোমিল মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে)।
টমেটোর ফল ছিদ্রকারী পোকা:
ক্ষতিরলক্ষণ

• কীড়া গাছের কচি অংশ খেয়ে বড় হয় এবং গর্ত করে ফলের ভিতরে ঢুকে বীজ খেয়ে ফসল ধ্বংস করে।
• একটি কীড়া একাধিক ফল নষ্ট করে।


দমন ব্যবস্থাপনা
• আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।
প্রোক্লেম ৫ এসজি- ১গ্রাম/লিটার পানি, প্রয়োজনীয় পানির সাথে আনুপাতিক হারে প্রোক্লেম মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন এবং ৫-৭ দিন অন্তর পুনরায় স্প্রে করতে হবে।
ভলিয়াম ফ্লেক্সি ৩০০ এসসি-প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ এমএল হারে ভলিয়াম ফ্লেক্সি মিশিয়ে গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করুন এবং ৭ দিন অন্তর পুনরায় স্প্রে করতে হবে।


জাব পোকা:
ক্ষতির লক্ষণ

• পূর্ণবয়ষ্ক ও নিম্ফ উভয়েই টমেটোর পাতা, কচি কান্ড, ফুল ও ফলের কুঁড়ি, বোঁটা এবং ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়।
• গাছ প্রথমে দুর্বল ও পরে হলুদ হয়ে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে।
• আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কচি ডগা মরে যায়। এছাড়া জাব পোকা এই জাতীয় ফসলে মোজাইক রোগ ছড়ায়।

দমন ব্যবস্থাপনা

জাব পোকার আক্রমন দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক মাত্রানুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।
বিভিন্ন ফসলে জাব পোকা দমনের জন্য একতারা ২৫ ডব্লিউজি কার্যকরী ও অনুমোদিত।
(২.৫ গ্রাম একতারা ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন।)

পানি ব্যবস্থাপনা
• ফসল ও মাটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সেচের চাহিদা নির্ণয় করতে হবে।
• শুষ্ক মৌসুমে চাষ করলে টমেটোতে পানি সেচ প্রয়োজন।
• অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিন বার সেচ দেয়াই যথেষ্ট।

ফসল সংগ্রহ
• জাত ও লাগানোর সময়ের উপর নির্ভর করে ২-৪ মাসের মধ্যেই ফসল তোলা যায়।
• টমেটো পাকা ও কাঁচা উভয় অবস্থায়ই তোলা যায়।
• তবে দূরে পাঠানোর জন্য একেবারে পাকা টমেটো তোলা উচিত নয়।
• পাকানোর জন্য বা টমেটোর ভাল রঙ আনার জন্য কৃত্রিম হরমোন ব্যবহার একেবারেই উচিৎ নয়।
• প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ২০-৪০ টন।

তথ্যসূত্র: সিনজেনটা

You may also like

1 of 5